আমাদের কাজ

বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও প্রকৃতির সব পর্যায়ের প্রয়োজনীয় সচেতনতা ও  রক্ষণাবেক্ষণ  

পৃথিবীর সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রাণের নাম মানুষ। বৈজ্ঞানিক নানা তথ্য-প্রমাণে বিবর্তনের প্রায় অবিশ্বাস্য সব ধাপ পেরিয়ে কিংবা ধর্মগ্রন্থগুলোর ভাষ্য অনুযায়ী স্বর্গ থেকে পৃথিবীতে পতন- যেভাবেই দেখি না কেন, মানব সম্প্রদায়ের চেয়ে বিচিত্র  অভিযাত্রার মধ্য দিয়ে অন্য কোন প্রাণীদলকে যেতে হয়নি। লাখো বছর আগে যে মানুষ ছিল অন্য অতিকায় সব প্রাণীর তুলনায় দুর্বল, ভীত, সামান্য; অসামান্য এক মস্তিষ্কের বিস্ময়কর ক্ষমতায় সেই মানুষ ধীরে ধীরে পরিণত হয়েছে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ জীবে; কৌতূহলে, বুদ্ধিতে, সৃজনশীলতায়, উদ্ভাবনে, আবিষ্কারে, শুভচিন্তার ক্ষমতায় মানুষের কাছাকাছিও কেউ নেই। দুঃখজনক হলেও সত্য, এই অনন্য সুকুমার বৃত্তিগুলোর আশীর্বাদে যেখানে মানুষের হয়ে উঠবার কথা ছিল প্রাণ ও প্রকৃতির পরম যত্নশীল রক্ষাকর্তায়, সেখানে মানুষ ধীরে ধীরে পাল্টে গেছে।

সবচেয়ে যোগ্য ও সর্বশ্রেষ্ঠ প্রাণী হিসেবে তার পৃথিবীর প্রতি যে দায়িত্ব ছিল, মাতৃরূপী প্রকৃতিকে ভালো রাখবার যে কর্তব্য ছিল, স্বজাতি ও অন্য সকল জীববৈচিত্র্যকে নিরাপদ রাখা উচিত ছিল, মানুষ ঠিক তার উল্টোপথে হেঁটেছে।নিজের অসীম সৃজনশীল ক্ষমতাকে সর্বগ্রাসী লোভ আর নিদারুণ স্বার্থপরতায় ব্যবহার করে শতাব্দীর পর শতাব্দী চরম ক্ষতি করে চলেছে জীবনদায়িনী এই প্রকৃতির, তার অন্য সকল সন্তানদের, বসবাসের অযোগ্য করে তুলছে এই চমৎকার নীল গ্রহটাকে, স্বার্থ, লোভ, হিংসা আর ক্ষমতা প্রদর্শনের মোহে অন্ধ হয়ে নিজেরা পরিণত হয়েছে খুনী নরপিশাচে। 

এই দানব হয়ে ওঠা মানুষকে ফেরাতে হবে তার শেকড়ের কাছে, মাতৃরূপী যে প্রকৃতির কাছ থেকে সন্তান হিসেবে শ্রেষ্ঠত্বের আশীর্বাদ পেয়েছিল সে, সেই শুভ্র সুন্দর প্রকৃতির কাছে।মনে করিয়ে দিতে হবে বিশুদ্ধ বাতাসের কাছে,শস্যদানার কাছে,  বৃষ্টির কাছে, ঘন অরণ্যের বিশালকায় বৃক্ষের কাছে, তৃণভূমির ক্ষুদ্র এক ঘাসের কাছে, এক ফোঁটা শিশির বিন্দুর কাছে, প্রকৃতির সন্তানদের কাছে, মানুষের কাছে তার প্রতিশ্রুতির কথা। মানুষকে ফেরাতে হবে তার উদার মানবিকতা, সৃষ্টিশীলতা আর উপকারী দায়িত্ববোধের কাছে।এই জন্মশেকড়ের মূলে ফেরার ভাবনা থেকেই ফার্স্ট পিপল ফাউন্ডেশনের জন্ম। মানুষকে মানুষের কাছে ফেরাতে পুরাণের সেই প্রথম মানুষদের কিছু উত্তরসূরীর প্রতিজ্ঞা।

ফার্স্ট পিপল ফাউন্ডেশন মূলত যে কোন সমস্যা, সংকট কিংবা সম্ভবনা, জনকল্যাণমুখী যে কোন প্রয়োজন কিংবা দরকারে, উদার ও মননশীল সমাজ তৈরি করতে, চারপাশের পরিবেশকে বাসযোগ্য করতে, নতুন করে সাজাতে ও সকল প্রাণীর সাথে সহাবস্থান নিশ্চিত করতে, আমাদের নীতি-নৈতিকতা আর মূল্যবোধে জমে থাকা ঘুণ আর শ্যাওলা সরিয়ে শুভবুদ্ধির চর্চা এবং “মানুষের তরে মানুষ আমরা” কথাটা নতুন চিন্তায় নতুনভাবে ভিন্ন আঙ্গিকে উপস্থাপনের মাধ্যমে এমন এক পথে হাঁটতে চায়, যে পথে হাঁটবার কথা এর আগে সেভাবে কেউ ভাবেনি এই পথটা আমাদের প্রথাগত চিন্তাভাবনা থেকে একেবারেই আলাদা, চেনাপরিচিত কিছুটা একঘেয়ে হয়ে পড়া নিয়মকানুনের বাইরে, কিন্তু একবার এই পথে হাটতে শুরু করার পর পাল্টে যাবে সব হিসাব, সাময়িক সমাধানের বদলে আসবে দীর্ঘমেয়াদে সুফল, শুরু হবে এবং টিকে থাকবে এমন অনেককিছুই, যা কেউ ভাবেনি আগে কখনো

আরেকটু বিস্তারিত ব্যাখা করতে গেলে বলা যায় ফার্স্ট পিপল নামটা মূলত এসেছে ভিন্ন কিছু ভাববার, ভিন্ন কিছু করবার তাগিদ থেকে। যেকোন সমস্যা-সংকট নিরসন কিংবা সম্ভবনার নতুন গল্প লিখতে আমরা প্রথাগত উপায়ে না গিয়ে যেতে চাই একদম গভীরে, কাজ করতে চাই শেকড় ধরে।যেকোন সমস্যা-সংকটের তাৎক্ষণিক সাময়িক সমাধান না খুঁজে তৈরি করতে চাই সমস্যার মূলোৎপাটনের প্রেক্ষাপট; যে কারণগুলো সমস্যাটা ঘটাচ্ছে, সংকটটা দীর্ঘদিন ধরে জিইয়ে রাখছে বা আবার ফিরিয়ে আনছে, সেই কারণগুলো পাকাপাকিভাবে মিটিয়ে ফেলতে নিরলস শ্রম দিতে চাই।প্রকৃতি ও তার সন্তানদের কাছে আমাদের দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে আমরা মানুষের কল্যাণে খুব সাধারণ কিন্তু অভিনব সব ধারণা নিয়ে কাজ করতে চাই যেটা দেখে আরো অসংখ্য মানুষ উদ্বুদ্ধ হবে ভালো কাজে, ভালো চিন্তায়, নিজের ভেতরে সুপ্ত থাকা শুভবুদ্ধি ও উদার হৃদয়ের তাগিদে সামিল হবে আমাদের শেকড়ে ফেরার এই যাত্রায়।

আমাদের কর্মক্ষেত্র

মানুষের শত অবিশ্বাস আর বিশ্বাসঘাতকতার সতর্ক উদাহরণ দেখেও আমরা আস্থা রাখতে চাই সেই মানুষের উপরেই, ফিরিয়ে আনতে চাই মানুষের উপকারী ইচ্ছেশক্তির উপর ভরসাটুকু। যেন মানুষ যে বিনা স্বার্থে বিনা কারণে বিনা প্রয়োজনে আরেকজন মানুষের উপকার করতে পারে, তার পাশে দাঁড়াতে পারে স্বেচ্ছায় কোন শর্ত ছাড়াই, সে ধারণাটা আরেকবার ছড়িয়ে যায় সবখানে। আমাদের এই বিস্তারিত কার্যক্রমে যে পদ্ধতিগুলো আমরা অনুসরণ করব, সেগুলো একেবারেই সাধারণ, চাইলেই এই পদ্ধতিতে যে কেউ কাজ করতে পারত আগে, কিন্তু এভাবেও যে ভাবা যেতে পারে, এভাবেও ভাবতে পারে আজকালকার মানুষ, সেই জায়গাটাই তো নষ্ট হয়ে গেছে। তাই আমরা সাধারণ কিন্তু অসাধারণ সেসব পথে হেঁটে আরেকবার মনে করিয়ে দেবো মানুষকে, চাইলেই আমরা জঘন্যতম লোভ-লালসা, ক্ষমতার অন্ধ প্রদর্শন, নিরন্ন-ক্ষুধার্থ মানুষের হাহাকার, গোঁড়ামি ও ধর্মান্ধতার বিষবাষ্প আর মাতৃরূপী প্রকৃতির উপর অনির্বচনীয় বর্বরতা এড়াতে পারতাম, এক আনন্দময় ভুবনে পরিণত করতে পারতাম এই নীল গ্রহকে… এখনো পারি।

মানুষকে মানুষের কাছে ফেরাবার যে গল্প লিখতে চলেছি আমরা, সেই আনন্দময় অভিযাত্রায় আপনাকে স্বাগতম।